ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
রোববার সকাল ৬টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। সকাল ৬টায় পানির স্তর ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার। সন্ধ্যা ৬টায় তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ২৮ মিটারে। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তার ডান তীরের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে বাঁশের পাইলিং করে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।
প্লাবিত গ্রাম ও ফসলের ক্ষতি
তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, দুপুরের পর থেকে পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর, পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, দ্রুত পানির প্রবাহে বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন ক্ষেত ডুবে গেছে এবং অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
পানির উচ্চতার পরিসংখ্যান
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানির স্তর ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ মিটার, বিকেল ৩টায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ২৮ মিটার।
পাউবো’র সতর্কতা
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে পানির উচ্চতা দ্রুত বেড়েছে। সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় কালীগঞ্জ এলাকায় তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়, যা মেরামতের কাজ চলছে।
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
